স্কুল থেকে বেরিয়ে অন্তু দেখে বাবা দাঁড়িয়ে আছে।দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে।আমার লক্ষ্মী বাবা বলে অন্তুর গালে চুমু এঁকে দেয় তার বাবা।গাড়িতে গিয়ে ওঠে।অন্তু জানেনা তার মা কোথায় ? তার বাবাও তাকে বলেনি তার মা কে ?তিনি কোথায় ? অন্তু যখন জানতে চায় আমার মা নেই কেন ? সে কথা শুনে চোখ জলে ভিজে উঠছে তার বাবার। মনে মনে বলেছে মা ছাড়া কি সন্তান হয় নাকিরে বোকা! নিজেই আবার নিজেকে প্রশ্ন করে বাবা ছাড়াও কি... শেষ আর করতে পারেনা। জন্মদাতা হওয়া সহজ,কিন্তু পিতা হওয়া কঠিন। তাই কি? আপনমনেই হেসে ওঠে অলিভ রহমান। সে অন্তুর কে ? পিতা না জন্মদাতা!
বললেনা বাবা আমার মা কোথায়? অন্তুর বাবা অলিভ কখনো চায়নি ছোট্ট অন্তুর মনে মার প্রতি ঘৃণা জন্মাক।তাই সে বলে, সবার কি মা থাকে? -তাহলে কি মা মারা গেছে? -কেন বাবা আমি কি তোর কেউনা? -তুমিতো আমার বাবা। আমার বন্ধু হিমেল,রিজু রনি,শান্ত ওদের যে বাবা আছে আবার মাও আছে। -মনে করো তোমার মা হারিয়ে গেছে। অলিভ জানেনা সে অন্তুকে তার সত্যিকারের পরিচয় থেকে কতদিন লুকিয়ে রাখতে পারবে। অন্তু যখন বড় হবে সেকি তার সত্যিকারের পরিচয় জানবেনা! তার স্ত্রী চলে যাওয়ার পর তার শুন্যতা পূরণের জন্য কোলে তুলে নেয় ক"দিনের শিশু অন্তুকে। কিংবা বলা যায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাধ্য হয় তুলে নিতে।
তাকেওতো একদিন রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছিল নিঃসন্তান এক দম্পতি। এতিমখানায় বড় হচ্ছিল সে। কৈশোরে উত্তীর্ণ হলে মটর গ্যারেজে কাজ শুরু করে। একদিন রাস্তায় এক ভদ্রলোকের গাড়ি নষ্ট হলে ১৩/১৪ বছরের ছেলেটি তার গাড়িটি রাস্তায় সারিয়ে দেয়। -কি নাম তোমার? -অলিভ। -বাঃ বেশ সুন্দর নাম। অলিভ মানে কি জানো? - নামের আবার মানে হয় নাকি! নামতো নামই। -অলিভ মানে জলপাই।খেতে খুব মজা। তারপর একটু থেমে ভদ্রলোকটি বলে,তোমার পরিচয়? -আমি গ্যারেজে কাজ করি। -এইটুকু বয়স! তোমার বাবা মা? -জানিনা। -মানে? -মানে আমি রাস্তার ছেলে.. -কি বলছ তুমি ?তুমি গ্যারেজে কাজ করছো,গাড়ি ঠিক করতে পারো। তুমি কেন রাস্তার ছেলে হবে।বরঞ্চ রাস্তার ছেলেতো ওরা। যাদের বাবামার অনেক সম্পদ আছে। তবুও ছিনতাই করে,নেশা করে। সন্ত্রাস করে।রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। চাঁদাবাজি করে। তারাইতো রাস্তার ছেলে। তারপর একটু থেমে বলে,আমি যদি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে চাই তুমি কি যাবে আমার সাথে।আমাদের বাড়িতে থাকবে। -কেন যাবো? -তুমি না বললে তুমি রাস্তার ছেলে। আমি আর আমার স্ত্রী তোমাকে পিতামাতার স্নেহে মানুষ করতে চাই।আমাদের কোন সন্তান নেই।
-কিন্তু আমি আমার গ্যারেজের মালিককে ছেড়ে যেতে পারবো না। -কেন সে কি তোমাকে আদর করে ভালবাসে? -তা জানিনা! তবে তিনি আমায় কাজ দিয়েছেন। সেদিন আর অলিভ যায়না ভদ্রলোকটির সাথে। কিন্তু ক"দিনের মধ্যেই গ্যারেজের মালিককে ম্যানেজ করে অলিভকে নিয়ে আসেন নিজ বাড়িতে। পিতামাতার স্নেহে মানুষ হতে থাকে সে। ঠিকানাবিহীন অলিভ এর আশ্রয় হয় অভিজাত বাড়িতে। বড় হতে থাকে। তারপর একসময় পরপারে চলে যান তার পালক ও আশ্রয় দেয়া বাবা মা।বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করার পাশাপাশি তার নামে উইল করে যাওয়া বিশাল সম্পত্তির মালিক হয় সে। বিয়েও করে। কিন্তু মেয়েটি তাকে ভালোবাসার পরিবর্তে তার অর্থকে বেশী ভালবাসতে লাগল। একসময় তার সত্যিকারের পরিচয় জানতেও পারল। ফলে সংসার টিকল না। একাকীত্ব পেয়ে বসল অলিভকে।ঠিক এরকমই একসময়, একদিন সন্ধ্যার কিছু পরে রাস্তার ডাস্টবিনে..কেঁদে উঠল একটি শিশু। বন্ধ ঘরে চিৎকার করে বলে উঠে অলিভ, হ্যাঁ ডাস্টবিনে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে শিশু।কাঁদতে থাকে অলিভ রহমান।
-বাবা আজ তোকে একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যাবো। গাড়ি থেকে নেমে আসে অন্তু। বিশাল সাইনবোর্ড-অন্তু শিশু বিকাশ কেন্দ্র।ভিতরে ঢোকে তারা। বাবা বলে, তোমার নামে এ প্রতিষ্ঠান। -এটি আমাদের ? অন্তু জানতে চায়। -না এটা এই শিশুদের। -মানে। - ওরা এখানকার বাসিন্দা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেলছে। কি হাসিখুশি না ওদের জীবন। -ওরা ওদের বাবামার কাছে থাকে না কেন? -আমাদের সমাজের কাছে ওরা গ্রহণীয় নয়। তুমি এখন বড় হয়েছে অনেক কিছু বুঝতে শিখেছো । ওদের জন্মের জন্য যারা দায়ী তাদের কাছে ওরা কাঙ্খিত নয়। সেইসব অনাকাংখিত সন্তানেরা এখানকার বাসিন্দা।
অন্তু বোঝে সেও নিশ্চয়ই কুড়িয়ে পাওয়া কোনো অনাকাংখিত সন্তান। বাবার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে ফেলে সে। বাবার চোখে জল।
বাবা অন্তুকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,বাবা আমরা দুজনেই এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান। চমকে ওঠে অন্তু। তার বাবা তাকে কি বলছে? সে বুঝেই নিয়েছিল যে সে রাস্তায় ফেলে দেয়া কোন শিশু।কিন্তু তার বাবা ..এ যে তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। বাবা অন্তু কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।এই প্রথম অন্তু আজ তার বাবাকে কাঁদতে দেখছে। সে কি সান্ত্বনা দেবে বাবাকে। বাবা তাকে জন্ম দেয়নি সত্য কিন্তু যে পিতৃস্নেহে মানুষ করেছে, কি করে সে ছেড়ে যাবে তাকে।আর এই স্নেহের আশ্রয় সে কোথায় পাবে? বাবার ঘরে ঢোকে অন্তু । বাবা চোখ বুজে শুয়ে আছে। বাবার মাথায় হাত রাখতে বাবা বলে, চলে যাচ্ছিস বাবা। -না বাবা। কোথায় যাবো ? তুমি জন্ম দাওনি এটা যেমন সত্য তেমনি তোমার স্নেহ ছাড়া আমি মানুষ হতে পারবোনা বাবা। তুমি না আমাকে মানুষ করে গড়তে চেয়েছো। আমি মানুষ হতে চাই বাবা। আমি তোমার মত দায়িত্বশীল বাবা হতে চাই।যে সন্তান জন্ম না দিয়েও বাবা হতে পারেন। অন্তুকে বুকে টেনে নেন তার বাবা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
তুমি জন্ম দাওনি এটা যেমন সত্য তেমনি তোমার স্নেহ ছাড়া আমি মানুষ হতে পারবোনা বাবা। তুমি না আমাকে মানুষ করে গড়তে চেয়েছো। আমি মানুষ হতে চাই বাবা। আমি তোমার মত দায়িত্বশীল বাবা হতে চাই।যে সন্তান জন্ম না দিয়েও বাবা হতে পারেন। অন্তুকে বুকে টেনে নেন তার বাবা। // onek valo laglo golpo .........dhonnobad......
জাকিয়া জেসমিন যূথী
খুউব সুন্দর। চোখের পানি ধরে রাখতে পারলামনা! এরকম গল্প স্রষ্টাকে ধন্যবাদ, এইরকম মানসিকতা নিয়ে ভাবার জন্য এবং সুন্দর করে ফুঁটিয়ে তুলে পাঠক হৃদয়কে নাড়িয়ে দেবার মত লেখনীর জন্য।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।